প্র্যাকটিক্যাল: বেঞ্জোয়িক অ্যাসিডের পুনঃকেলাসন (Recrystallization of Benzoic Acid)
নীতি (Principle):
পুনঃকেলাসনএকটি বহুল ব্যবহৃত পরিশোধন পদ্ধতি, যেখানে কোনো কঠিন অশুদ্ধ রাসায়নিককে গরম দ্রাবকে দ্রবীভূত করে, অদ্রাব্য অশুদ্ধি দূর করে এবং ঠান্ডা করে বিশুদ্ধ স্ফটিক সংগ্রহ করা হয়। এই পরীক্ষায় আমি অশুদ্ধ বেঞ্জোয়িক অ্যাসিডকে গরম জলে দ্রবীভূত করেছি এবং ধীরে ধীরে ঠান্ডা করে এর সুন্দর সাদা সূচাকৃতির বিশুদ্ধ কেলাস সংগ্রহ করেছি।
বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড গরম জলে বেশ পরিমাণে দ্রবীভূত হয় কিন্তু ঠান্ডা জলে দ্রবণীয়তা কম। তাই গরম অবস্থায় দ্রবীভূত করে এবং ঠান্ডা করলে স্ফটিক আকারে জমে ওঠে। দ্রবণে উপস্থিত অদ্রাব্য অশুদ্ধি গরম অবস্থায় পরিস্রাবণ করলে দূর হয়ে যায়। ফলে শেষে বিশুদ্ধ বেঞ্জোয়িক অ্যাসিডের কেলাস পাওয়া যায়।
যন্ত্রপাতি (Apparatus):
- 250 mL বিকার
- 150 mL পোর্সেলিন বেসিন
- ধৌতি বোতল
- স্ট্যান্ড, ফানেল, ফিল্টার পেপার
- কাচদণ্ড
- ত্রিপদ স্ট্যান্ড
- লৌহ-বলয়
- বালিগাহ
- বুনসেন বার্নার বা স্পিরিট ল্যাম্প
- ওয়াচ গ্লাস
- শোষক কাগজ
দ্রব্যাদি (Chemicals):
- বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড নমুনা – 10 গ্রাম
- পাতিত জল – 50 mL
পদ্ধতি (Procedure):
(১) বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড দ্রবীভূত করা:
একটি বিকারে (250mL) প্রায় 50 mL নাতিশী উষ্ণ জল নিয়ে তাতে অল্প অল্প করে নমুনা বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড যোগ করা হল। প্রতিবার বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড যোগ করার পর কাচদণ্ড দিয়ে দ্রবণটি নাড়তে থাকা হল, যতক্ষণ পর্যন্ত না কিছু পরিমাণ বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড অধঃক্ষিপ্ত হয়।
(২) সম্পৃক্ত দ্রবণ পরিস্রাবণ:
নাতিশী উষ্ণ দ্রবণটিকে আমি একটি পরিষ্কার ফানেল ও ফিল্টার পেপার ব্যবহার করে দ্রুত পরিস্রাবণ করলাম। এতে অদ্রাব্য অশুদ্ধি ফিল্টার পেপারে থেকে গেল এবং পরিষ্কার পরিস্রুত দ্রবণটি পোর্সেলিন বেসিনে সংগ্রহ করলাম।
গরম অবস্থায় পরিস্রাবণের কারণ: যাতে বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড দ্রবণে থেকেই যায় এবং ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত স্ফটিক না পড়ে।
(৩) দ্রবণ ঘন করা (Concentration):
পরিস্রুত দ্রবণসহ পোর্সেলিন বেসিনটিকে আমি বালিগাহের ওপর রাখলাম এবং নিচে বুনসেন বার্নার/স্পিরিট ল্যাম্প জ্বালিয়ে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত করলাম। দ্রাবক বাষ্পীভূত হয়ে দ্রবণ ঘন হতে লাগল। যখন মনে হল দ্রবণটি যথেষ্ট ঘন হয়েছে, তখন আমি কাচদণ্ড ডুবিয়ে তার ডগায় এক ফোঁটা দ্রবণ নিয়ে ফুঁ দিলাম। যখন সাদা কঠিন পদার্থের আস্তর দেখা গেল, বুঝলাম – দ্রবণটি কেলাসন বিন্দুতে পৌঁছে গেছে।
(৪) শীতলকরণ (Cooling):
কেলাসন বিন্দুতে পৌঁছানোর পর উত্তাপ বন্ধ করলাম। পোর্সেলিন বেসিনের মুখে একটি ওয়াচ গ্লাস দিয়ে ঢেকে দিলাম যাতে ধুলো না পড়ে। এরপর দ্রবণটিকে ঘরের তাপমাত্রায় ধীরে ধীরে ঠান্ডা হতে দিলাম। ধীরে ঠান্ডা করলে সূচাকৃতির বড় ও বিশুদ্ধ স্ফটিক গঠিত হয়, দ্রুত ঠান্ডা করলে ছোট কেলাস গঠিত হয়।
(৫) কেলাস পরিস্রাবণ ও ধোওয়া:
যখন সুন্দর সাদা স্ফটিক দেখা গেল, তখন সেটি ফানেল ও ফিল্টার পেপারের সাহায্যে পরিস্রাবণ করলাম। কেলাসটিকে ফিল্টার পেপারে রেখে ঠান্ডা পাতিত জল দিয়ে সামান্য ধুয়ে নিলাম যাতে দ্রবণে থাকা বাকি অম্লীয় অংশ বা অশুদ্ধি সরে যায়।
(৬) কেলাস শুকানো:
আমি স্ফটিকটিকে শোষক কাগজের ওপর রেখে হালকা চাপ দিয়ে প্রথমে উপরিভাগের জল শুকিয়ে নিলাম। তারপর শোষকাধারে কয়েক মিনিট রেখে সম্পূর্ণ শুষ্ক করলাম।
(৭) কেলাস সংগ্রহ ও লেবেলিং:
শুষ্ক কেলাসটিকে সেলোফেন কাগজে মুড়ে অথবা একটি কর্কযুক্ত শুকনো পরীক্ষানলে নিয়ে জমা রাখলাম। এরপর নমুনার নাম, তারিখ, ওজন ইত্যাদি লেবেলে লিখে দিলাম।
সতর্কতা (Precautions):
- পরিস্রাবণের সময় দ্রবণ গরম থাকতে হবে, না হলে বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড আগেই জমে যাবে।
- বালিগাহ ব্যবহার করলে তাপ সমানভাবে পাওয়া যায়।
- ধীরে ধীরে ঠান্ডা করলে বড় ও বিশুদ্ধ স্ফটিক পাওয়া যায়।
- ইচ্ছাকৃতভাবে দ্রুত ঠান্ডা করে বরফ ব্যবহার করলে ছোট কেলাস তৈরি হয় – এটি এড়াতে হবে।
- সব যন্ত্রপাতি পরিষ্কার ব্যবহার করতে হবে।
- ফিল্টার পেপার ভিজিয়ে ব্যবহার করলে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
পরীক্ষালব্ধ ফলাফল (Result):
আমি পরীক্ষায় প্রাপ্ত শুষ্ক সাদা সূচাকৃতির বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড কেলাস শিক্ষক মহাশয়ের কাছে জমা দিলাম। কেলাসটির ওজন পরিমাপ করে পেলাম—
9.2 g / 9.3 g / 9.4 g (পরীক্ষার উপর নির্ভর করে)।
ফলাফল থেকে বোঝা গেল যে অশুদ্ধ 10 g নমুনা থেকে প্রায় 9.3 g বিশুদ্ধ বেঞ্জোয়িক অ্যাসিড পাওয়া গেছে।