একজন সুস্থ ব্যক্তি যদি তার দেহের ওজনের কেজিপতি ৫০ মিলিগ্রাম জল পান করেন তবে তার দেহের দৈনন্দিন জলের চাহিদা পূর্ণ হবে।
মানুষের প্রতিনিয়ত কিছু করার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। এই শক্তি আসে খাদ্য গ্রহণ করার মাধ্যমে। খাদ্যের যে প্রয়োজন উপাদানগুলি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে সেগুলোকে বলা হয় খাদ্য উপাদান। ঠিকঠাক মত খাবার খেলে সুস্থ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে।
খাদ্য উপাদানের শ্রেণীবিভাগ:
- শর্করা বা কার্বোহাইডেট
- প্রোটিন
- ফ্যাট
- ভিটামিন
- জল
- খনিজ মৌল
- খাদ্য তন্তু
- ফাইটোকেমিক্যাল
আমরা যে শর্করা খাবার খাই, সেগুলির দেহের ভিতর ভেঙ্গে গিয়ে গ্লুকোজ উৎপন্ন হয়। এইগুলো পথ আমাদের শরীরের সমস্ত অংশে পৌঁছে যায় রক্তের মাধ্যমে। সেখানে কোষের ভিতর বাতাস থেকে নেওয়া অক্সিজেনের সাহায্যে সে গ্লুকোজ থেকে তৈরি হয় শক্তি। সুস্থ ভাবে মানুষের দেহের পোশাক গ্লুকোজ থেকে শক্তি তৈরি হয়। কিন্তু রক্তের গ্লুকোজ যদি বসে না ঢুকতে পারে এবং রক্তেই থেকে যায়। তবে এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগ হয়।
প্রোটিন
মানব শরীরের প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা অসীম।
- কেরাটিন প্রোটিন চুল এবং নখ তৈরি করে।
- একটিন ও মায়োসিন প্রোটিন পেশী সৃষ্টি করে।
- হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্ত অনিকা তৈরি করে।
- গ্লোবিউলিন, ফাইব্রিনোজেন প্রোটিন রক্তের প্লাজমা তৈরি করে।
- কোলাজেন প্রোটিন অস্থি, টেন্ডন, লিগামেন্ট তৈরি করে।
মানব শরীরে যে স্টিমিল্লাস রেসপন্স ক্রিয়া কাজ করে তার রাসায়নিক বিক্রিয়ক পদার্থ গুলি সব প্রোটিন ঘটিত।
আমরা যে প্রোটিন জাতীয় খাবার পায় সেখান থেকে অ্যামাইনো এসিড তৈরি হয়। উদাহরণ হিসেবে আমরা যে ডিম গ্রহণ করি সেখানে প্রায় ১৫ থেকে ২০ প্রকারের ভিন্ন অ্যামাইনো এসিড পাওয়া যায়।
কোন কোন খাদ্য থেকে প্রোটিন পায় সে বিষয়ে আলোচনা এখানে জরুরী মনে করছি না।
প্রোটিনের অভাবে যে রোগ গুলি হয় সেগুলি হল: marasmus
লিপিড
লিপিড মূলত চর্বি জাতীয় পদার্থ। যা মানব শরীরের ঘাড় গলায় হাতের উপরে বুকে পেটে এবং উরুতে দেখা যায়। উদ্ভিজ্জ এবং প্রাণীর তেল জাতীয় খাদ্যে লিপিড পাওয়া যায়।
ভিটামিন
বিজ্ঞানী কাসিমির ও হপকিন্স নানা ঘটনা লক্ষ্য করে দেখেন যে খাদ্যের মধ্যে কার্বোহাইডেট প্রোটিন ও লিকুইড ছাড়াও এমন কিছু উপাদান আছে। যার অভাবে স্কার্ভি বা বেরিবেরি মত রোগ হয়। এই উপাদান গুলি হল ভিটামিন। যেগুলি খাদ্যের মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে থাকে। এদিক থেকে শক্তি পাওয়া যায় না।
- তেলে দ্রবণীয় ভিটামিন গুলি হলেও A, D, E, K
- জলে দ্রবণে ভিটামিন হলো B & C
Vitamin A অভাব → রাতকানা (Night blindness)
Vitamin B1 (Thiamine) অভাব → বেরিবেরি (Beri-beri)
Vitamin B2 (Riboflavin) অভাব → চোখ ও জিভের প্রদাহ (Cheilosis/Glossitis)
Vitamin B3 (Niacin) অভাব → পেল্লাগ্রা (Pellagra)
Vitamin B6 (Pyridoxine) অভাব → খিঁচুনি / এনিমিয়া
Vitamin B9 (Folic acid) অভাব → মেগালোব্লাস্টিক এনিমিয়া
Vitamin B12 (Cobalamin) অভাব → পার্নিশিয়াস এনিমিয়া
Vitamin C অভাব → স্কার্ভি (Scurvy)
Vitamin D অভাব → রিকেটস (শিশুতে) / অস্টিওম্যালেশিয়া (বয়স্কে)
Vitamin E অভাব → বন্ধ্যাত্ব / স্নায়ু দুর্বলতা
Vitamin K অভাব → রক্ত না জমা (Bleeding disorder)
ভিটামিন A – গাজর, কুমড়ো, টমেটো, পালং শাক, কলিজা, দুধ, ডিমের কুসুম, মাছের তেল
ভিটামিন D – সূর্যালোক, মাছের তেল, ডিমের কুসুম, মাখন, দুধ
ভিটামিন E – উদ্ভিজ্জ তেল, বাদাম, বীজ, শাকসবজি, গমের ভুসি
ভিটামিন K – পালং শাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, কলিজা, সবুজ শাকসবজি
ভিটামিন B₁ (থায়ামিন) – চালের ভুসি, গম, ডাল, চিনাবাদাম, মাংস, ডিম
ভিটামিন B₂ (রিবোফ্লাভিন) – দুধ, ডিম, সবুজ শাকসবজি, কলিজা
ভিটামিন B₃ (নায়াসিন) – মাংস, মাছ, বাদাম, শস্য, ডাল, চিনাবাদাম
ভিটামিন B₅ (প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড) – সবজি, শস্যদানা, ডিম, দুধ
ভিটামিন B₆ (পাইরিডক্সিন) – কলা, আলু, ডাল, মাছ, মাংস
ভিটামিন B₇ (বায়োটিন) – ডিমের কুসুম, দুধ, বাদাম, কলিজা
ভিটামিন B₉ (ফোলিক অ্যাসিড) – পালং শাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি, ডাল, কমলালেবু
ভিটামিন B₁₂ (সায়ানোকোবালামিন) – মাছ, মাংস, কলিজা, দুধ, ডিম
ভিটামিন C (অ্যাসকরবিক অ্যাসিড) – আমলকি, লেবু, কমলা, পেয়ারা, টমেটো, কাঁচা মরিচ, বাঁধাকপি
খনিজ মৌল
নিচে মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ মৌলগুলিকে ম্যাক্রো ও মাইক্রো পুষ্টি (nutrients) শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলো।
ম্যাক্রো মিনারেলস (Macronutrients)
- ক্যালসিয়াম (Calcium)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 1000 মি.গ্রা.
- উৎস: দুধ, দই, পনির, ডিম, ছোট মাছ, সবুজ শাকসবজি
- কাজ: হাড় ও দাঁত মজবুত করা, রক্ত জমাট বাঁধা, পেশী সংকোচন
- অভাব: রিকেটস, অস্টিওপোরোসিস, দাঁতের ক্ষয়
- ফসফরাস (Phosphorus)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 700 মি.গ্রা.
- উৎস: দুধ, মাছ, মাংস, ডাল, বাদাম
- কাজ: হাড় ও দাঁতের গঠন, শক্তি উৎপাদন (ATP)
- অভাব: দুর্বল হাড়, ক্ষুধামান্দ্য, ক্লান্তি
- পটাশিয়াম (Potassium)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 3500 মি.গ্রা.
- উৎস: কলা, আলু, টমেটো, শাকসবজি, কমলা
- কাজ: স্নায়ুতন্ত্র ও পেশীর কাজ, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
- অভাব: পেশী দুর্বলতা, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
- সোডিয়াম (Sodium)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 1500 মি.গ্রা.
- উৎস: লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার
- কাজ: রক্তের পিএইচ ও তরল ভারসাম্য বজায় রাখা, স্নায়ুর উদ্দীপনা পরিবহন
- অভাব: দুর্বলতা, নিম্ন রক্তচাপ, মাথা ঘোরা
- ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 300–400 মি.গ্রা.
- উৎস: বাদাম, বীজ, ডাল, সবুজ শাক
- কাজ: এনজাইমের কাজ, হাড় ও দাঁতের গঠন, পেশীর স্বাভাবিক কাজ
- অভাব: খিঁচুনি, হৃদস্পন্দনের অনিয়ম, দুর্বলতা
- ক্লোরিন (Chlorine/Chloride)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 2300 মি.গ্রা. (লবণের অংশ হিসাবে)
- উৎস: সাধারণ লবণ, প্রক্রিয়াজাত খাবার
- কাজ: হজমে সহায়ক হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি, তরল ভারসাম্য
- অভাব: বমি বমি ভাব, দুর্বল হজম
- সালফার (Sulfur)
- দৈনিক প্রয়োজন: নির্দিষ্ট নয়, প্রোটিন থেকে পাওয়া যায়
- উৎস: ডিম, মাংস, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন
- কাজ: অ্যামিনো অ্যাসিড ও ভিটামিনের উপাদান, চুল-নখ শক্ত রাখা
- অভাব: সাধারণত বিরল, ত্বক ও চুলের সমস্যা
মাইক্রো মিনারেলস (Micronutrients/Trace Elements)
- আয়রন (Iron)
- দৈনিক প্রয়োজন: পুরুষদের জন্য প্রায় 8 মি.গ্রা., মহিলাদের জন্য 18 মি.গ্রা.
- উৎস: কলিজা, লাল মাংস, ডাল, শাকপাতা, গুড়
- কাজ: হিমোগ্লোবিন তৈরি, অক্সিজেন পরিবহন
- অভাব: অ্যানিমিয়া, দুর্বলতা, ক্লান্তি
- আয়োডিন (Iodine)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 150 মাইক্রোগ্রাম
- উৎস: আয়োডিনযুক্ত লবণ, সামুদ্রিক মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল
- কাজ: থাইরয়েড হরমোন তৈরি
- অভাব: গয়টার, হাইপোথাইরয়ডিজম
- জিঙ্ক (Zinc)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 10 মি.গ্রা.
- উৎস: মাংস, মাছ, বাদাম, শস্যদানা
- কাজ: রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, ক্ষত নিরাময়, এনজাইম কার্যকলাপ
- অভাব: বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
- কপার (Copper)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 1 মি.গ্রা.
- উৎস: বাদাম, বীজ, সামুদ্রিক খাবার, কলিজা
- কাজ: রক্তকণিকা গঠন, এনজাইম সক্রিয়করণ
- অভাব: অ্যানিমিয়া, হাড় দুর্বলতা
- ফ্লুরিন (Fluorine)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 3–4 মি.গ্রা.
- উৎস: ফ্লুরাইডযুক্ত পানি, মাছ, চা
- কাজ: দাঁত ও হাড় মজবুত করা
- অভাব: দাঁতের ক্ষয়
- সেলেনিয়াম (Selenium)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 55 মাইক্রোগ্রাম
- উৎস: সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, ডিম
- কাজ: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইমের অংশ, রোগ প্রতিরোধ
- অভাব: মাংসপেশি দুর্বলতা, হৃদরোগ
- ম্যাঙ্গানিজ (Manganese)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 2 মি.গ্রা.
- উৎস: বাদাম, শস্যদানা, সবুজ শাকসবজি
- কাজ: হাড় গঠন, এনজাইম সক্রিয়করণ
- অভাব: দুর্বল হাড়, চুল পড়া
- ক্রোমিয়াম (Chromium)
- দৈনিক প্রয়োজন: প্রায় 30 মাইক্রোগ্রাম
- উৎস: শস্যদানা, মাংস, ডিম, চিজ
- কাজ: গ্লুকোজ বিপাক নিয়ন্ত্রণ
- অভাব: ডায়াবেটিসের মতো উপসর্গ
জল
মানব শরীরে জলের প্রয়োজনীয়তা
- মানব শরীরের প্রায় 60–70% অংশ জল দ্বারা গঠিত।
- জল শরীরের রক্ত, কোষ, হজম রস, মূত্র এবং ঘামের মধ্যে থাকে।
- জল শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- হজম, রক্ত সঞ্চালন, পুষ্টি পরিবহন এবং বর্জ্য অপসারণে জল অপরিহার্য।
- দৈনিক প্রয়োজন প্রায় 2–3 লিটার জল (খাদ্য ও পানীয় মিলিয়ে)।
শরীরে জল প্রবেশ (Intake)
- পানীয় জল – প্রায় 1.5 থেকে 2 লিটার।
- খাদ্য থেকে (ফল, শাকসবজি ইত্যাদি) – প্রায় 0.5 লিটার।
- শরীরের ভেতরে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি – প্রায় 0.3 লিটার।
মোট প্রবেশ: গড়ে প্রায় 2.3–2.8 লিটার।
শরীর থেকে জল বের হওয়া (Loss)
- মূত্রের মাধ্যমে – প্রায় 1.5 লিটার।
- ঘামের মাধ্যমে – প্রায় 0.5 লিটার।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে – প্রায় 0.3 লিটার।
- মলের মাধ্যমে – প্রায় 0.1–0.2 লিটার।
মোট বের হওয়া: গড়ে প্রায় 2.3–2.5 লিটার।
পৃথিবীতে জলের পরিমাণ (Water on Earth)
- পৃথিবীর প্রায় 71% অংশ জল দ্বারা আচ্ছাদিত।
- পৃথিবীর মোট জল = 100% ধরে নিলে –
সমুদ্র ও মহাসাগরের লবণাক্ত জল – প্রায় 97%।
মিঠা জল – প্রায় 3%।
মিঠা জলের শতকরা হিসাব
- হিমবাহ ও বরফস্তূপ – প্রায় 68–69%।
- ভূগর্ভস্থ জল – প্রায় 30%।
- নদী, হ্রদ ও পুকুর – প্রায় 0.3%।
- বায়ুমণ্ডলীয় জলীয় বাষ্প – প্রায় 0.04%।
এইভাবে জল মানব শরীরের জন্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি পৃথিবীতে জীবজগতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেও অপরিহার্য।
ভূপৃষ্ঠীয় জলের মধ্যে বিভাজনঃ
- হ্রদ (Lakes) – প্রায় 87%
- জলাভূমি (Swamps) – প্রায় 11%
- নদী (Rivers) – প্রায় 2%
ফাইবার (খাদ্য তন্তু)
আমাদের কীভাবে সাহায্য করে
- হজম সহজ করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- শরীর থেকে বর্জ্য সহজে বের করতে সাহায্য করে।
- রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- রক্তে কোলেস্টেরল কমায়।
- দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়া কম হয়।
- হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
নিচে প্রধান খাবার, শাকসবজি ও ফলমূলের মধ্যে থাকা সুনির্দিষ্ট ফাইবারের ধরন এবং তার কাজ পয়েন্ট আকারে দিলাম:
শাকসবজি
- পালং শাক, বাঁধাকপি, ব্রকলি – সেলুলোজ ও হেমিসেলুলোজ → হজম সহজ করা, কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ
- গাজর, কুমড়ো – পেকটিন → অন্ত্রে পানি ধরে রাখে, হজম সহজ করে
- বেগুন, সিম, ধনেপাতা – লিগনিন ও সেলুলোজ → অন্ত্রের গতি নিয়ন্ত্রণ, বর্জ্য দ্রুত বের হওয়া
ফলমূল
- কলা – পেকটিন → কোষ্ঠকাঠিন্য কমানো, দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখা
- আপেল, পেয়ারা – পেকটিন ও সেলুলোজ → হজম সহজ করা, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ
- কমলা, লেবু – পেকটিন → হজম সহায়তা, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
- ডাল ও শস্য
- মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন – হেমিসেলুলোজ ও লিগনিন → হজমে সাহায্য, শক্তি নিয়ন্ত্রণ
- গমের ভুসি, ওটস – সেলুলোজ ও বিটা-গ্লুকান → কোষ্ঠকাঠিন্য কমানো, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ
- বাদাম ও বীজ – বাদাম, সোনারচি বীজ, তিল – সেলুলোজ ও লিগনিন → হজম সহজ করা, দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখা
ফাইটো-কেমিক্যালস (Phytochemicals)
নিচে ফলমূল ও শাকসবজিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ফাইটো-কেমিক্যালস (Phytochemicals), তাদের সুনির্দিষ্ট নাম এবং কাজ পয়েন্ট টু পয়েন্ট আকারে সাজানো হলো। এটি সরাসরি আপনার ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা যাবে এবং টেক্সট টু অডিও অ্যাপ দিয়ে সহজে শুনতেও পারবেন।
শাকসবজি এবং তাদের ফাইটো-কেমিক্যালস
- বেগুন (Brinjal / Eggplant) – Nasunin → শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মস্তিষ্ক ও কোষকে রক্ষা করে
- গাজর (Carrot) – Beta-Carotene → চোখের দৃষ্টি উন্নত করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- টমেটো (Tomato) – Lycopene → ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য, হৃদরোগ কমায়
- কুমড়ো (Pumpkin) – Carotenoids → চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- কর্লা / করলা (Bitter gourd) – Charantin, Momordicin → রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিসে সহায়ক
- আদা (Ginger) – Gingerol → প্রদাহ কমায়, হজম উন্নত করে
- পেঁপে (Papaya) – Papain, Carotenoids → হজম সহজ করা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- তরমুজ (Watermelon) – Citrulline, Lycopene → হৃৎপিণ্ড স্বাস্থ্য, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- বেদানা (Spinach / Palong shak) – Lutein, Zeaxanthin → চোখের দৃষ্টি উন্নত, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- লাল বাঁধাকপি (Red cabbage) – Anthocyanins → প্রদাহ কমায়, ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
- ব্রকলি (Broccoli) – Sulforaphane → ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য, শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- রঙিন শিম (Capsicum / Bell pepper) – Capsanthin, Beta-Carotene → চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
ফাইটো-কেমিক্যালসের কাজ
- কোষ ও শরীরকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যক্রম)
- ক্যান্সার, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে
- প্রদাহ কমায় ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
- চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে
- হজমে সহায়ক ও শক্তি বৃদ্ধি করে
ভারতের সাধারণ খাদ্যাভ্যাসে ব্যবহৃত প্রক্রিয়াজাত ও সংশ্লেষিত খাদ্যপণ্য
প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য
- ব্রেড ও বিস্কুট
- রাসায়নিক উপাদান: ব্রেড মেশিনে ব্যবহৃত ইমালসিফায়ার, প্রিজারভেটিভস (যেমন সোডিয়াম বেনজোয়েট)
- ক্ষতিকারক প্রভাব: হজমে সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে কিডনি ও লিভারের উপর প্রভাব ফেলতে পারে
- নুডলস ও পাস্তা
- রাসায়নিক উপাদান: ব্রাইটনিং এজেন্টস, সোডিয়াম বেনজোয়েট
- ক্ষতিকারক প্রভাব: ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি
- স্ন্যাকস (চিপস, পাফস)
- রাসায়নিক উপাদান: ট্রান্স ফ্যাট, সোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG), ফ্লেভার এনহান্সার্স
- ক্ষতিকারক প্রভাব: মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস, হজমে সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ
- সফট ড্রিঙ্কস ও এনার্জি ড্রিঙ্কস
- রাসায়নিক উপাদান: ক্যাফেইন, সুইটেনারস, কৃত্রিম ফ্লেভারস
- ক্ষতিকারক প্রভাব: ডায়াবেটিস, হাড়ের দুর্বলতা, মূত্রথলির সমস্যা
- ইনস্ট্যান্ট ফুডস (যেমন ম্যাগি)
- রাসায়নিক উপাদান: ব্রাইটনিং এজেন্টস, সোডিয়াম বেনজোয়েট, ফ্লেভার প্যাকেটস
- ক্ষতিকারক প্রভাব: হজমে সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি সমস্যা
সাধারণ মসলা ও সংশ্লেষিত খাদ্যপণ্য
- হলুদ (কৃত্রিম রঙযুক্ত)
- রাসায়নিক উপাদান: মেটানিল ইয়েলো (Metanil Yellow)
- ক্ষতিকারক প্রভাব: কিডনি ও লিভারের উপর প্রভাব, অ্যালার্জি
- মিষ্টি ও সস্তা বিরিয়ানি
- রাসায়নিক উপাদান: মেটানিল ইয়েলো, রোজিন (Carmine)
- ক্ষতিকারক প্রভাব: হজমে সমস্যা, ত্বকে র্যাশ, হাইপারঅ্যাকটিভিটি
- প্যাকেটজাত মসলা (যেমন চাট মসলা, তন্দুরি মসলা)
- রাসায়নিক উপাদান: সিনথেটিক ফ্লেভারস, প্রিজারভেটিভস
- ক্ষতিকারক প্রভাব: হজমে সমস্যা, অ্যালার্জি
- প্যাকেটজাত দই ও দুধ
- রাসায়নিক উপাদান: সিনথেটিক ফ্লেভারস, প্রিজারভেটিভস
- ক্ষতিকারক প্রভাব: হজমে সমস্যা, অ্যালার্জি
রাসায়নিক দ্রব্যের নাম ও তাদের ক্ষতিকারক প্রভাব
- মেটানিল ইয়েলো (Metanil Yellow)
- ব্যবহৃত হয়: হলুদ রঙের জন্য
- ক্ষতিকারক প্রভাব: কিডনি ও লিভারের উপর প্রভাব, অ্যালার্জি
- রোজিন (Carmine)
- ব্যবহৃত হয়: লাল রঙের জন্য
- ক্ষতিকারক প্রভাব: হজমে সমস্যা, ত্বকে র্যাশ, হাইপারঅ্যাকটিভিটি
- সোডিয়াম বেনজোয়েট (Sodium Benzoate)
- ব্যবহৃত হয়: প্রিজারভেটিভ হিসেবে
- ক্ষতিকারক প্রভাব: হজমে সমস্যা, অ্যালার্জি
- সোডিয়াম গ্লুটামেট (MSG)
- ব্যবহৃত হয়: ফ্লেভার এনহান্সার হিসেবে
- ক্ষতিকারক প্রভাব: মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস, হজমে সমস্যা








